উদ্ভিদ প্রজননঃ প্রজনন হল এমন একটি প্রক্রিয়া যা দ্বারা উদ্ভিদ এবং প্রাণী তার প্রতিরুপ বা বংশধর সৃষ্টি করে।
পাথরকুচি
আদা
কাকরোল
পটল
বীজপত্র
ভ্রুণ কান্ড
ভ্রূণ মূল
সবগুলো
তিনটি উপায়ে উদ্ভিদের প্রজনন ঘটে, যথা-যৌন জনন, অযৌন জনন ও অঙ্গজ জনন।
আবৃতবীজী উদ্ভিদে ডিম্বাণু সৃষ্টি হয় ডিম্বকে, ডিম্বক সৃষ্টি ফুলের স্ত্রীকেশরের গর্ভাশয়ে। শুক্রাণু সৃষ্টি হয় পরাগরেণুতে, পরাগরেণু সৃষ্টি হয় ফুলের পুংকেশরের পরাগধানীতে। কাজেই ফুলই আবৃতবীজী উদ্ভিদে জননাঙ্গ ধারণ করে। ফুল হলো উদ্ভিদের বংশবিস্তারের (প্রজননের জন্য বিশেষভাবে রূপান্তরিত বিটপ (shoot)।
যৌন প্রজনন (Sexual reproduction) : দু'টি ভিন্ন প্রকৃতির গ্যামিটের (পুং এবং স্ত্রী গ্যামিট) মিলনের মাধ্যমে যে প্রজনন প্রক্রিয়ার সূচনা হয় তাই যৌন প্রজনন। যৌন প্রজননের মাধ্যমে সবীজী উদ্ভিদে বীজের সৃষ্টি হয়, তাই বীজ দ্বারা বংশবৃদ্ধি প্রক্রিয়াই যৌন প্রজনন । আবৃতবীজী উদ্ভিদের যৌন প্রজনন উগ্যামাস ধরনের।
রেণুস্থলী বা পরাগরেণুর পরিস্ফুটন (Development of Microsporangia) : ফুলের তৃতীয় স্তবক হলো পুংজনন স্তবক। এক বা একাধিক পুংকেশর নিয়ে এ স্তবক গঠিত। প্রতিটি পুংকেশর নিচে দণ্ডাকার পুংদণ্ড (filament) এবং মাথায়।স্ফীত পরাগধানী (anther) নিয়ে গঠিত। পরাগধানীর দুটি খণ্ডের মাঝখানে একটি যোজনী (connective) থাকে। পরাগধানী (anther) অনেকটা চারকোণবিশিষ্ট হয়। প্রতি কোলে ভেতরের দিকে কিছু কোষ আশপাশের কোষ বড় হয়। এদের ঘন সাইটোপ্লাজম এবং বড় নিউক্লিয়াস থাকে । এসব কোষকে আর্কিস্পোরিয়্যাল কোষ (cell) বলা হয়। এ কোষ প্রজাতিভেদে সংখ্যায় এক থেকে একাধিক থাকতে পারে। আর্কিস্পোরিয়্যাল কোষ বিভাজিত হয়ে পরিধির দিকে দেয়ালকোষ এবং কেন্দ্রের দিকে প্রাথমিক জননকোষে (primary sporogenous cell)পরিনত হয়।দেয়ালকোষ হতে পরে ৩-৫ স্তরবিশিষ্ট প্রাচীর গঠিত হয়। পরাগধানীর প্রাচীর ঘেরা এ অংশকে পরাগথলি বা pollen sac বলে। প্রাচীরের সবচেয়ে ভেতরের স্তর হলো ট্যাপেটাম।
প্রাথমিক জনন কোষ পরাগমাতৃকোষ হিসেবে কাজ করতে পারে অথবা বিভাজিত হয়ে অনেকগুলো পরাগমাতৃকোষে পরিনত হতে পারে। পরাগমাতৃকোষে তখন মায়োসিস (meiosis) বিভাজন হয়, ফলে প্রতিটি ডিপ্লয়েড (2n) পরাগ মাতৃকোষ হতে চারটি হ্যাপ্লয়েড (n) পরাগরেণুর সৃষ্টি হয়। পরাগরেণু বিভিন্ন বর্ণের হতে পারে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাধারণত হলুদ বর্ণের হয়। ট্যাপেটাম (tapeturn) বিগলিত হয়ে পরিস্ফুটিত পরাগরেণুর পুষ্টি সাধন করে। পরাগমাতৃকোষ হতে সৃষ্ট চারটি পরাগরেণু বিভিন্ন প্রজাতিতে বিভিন্নভাবে সাজানো থাকে, চারটি পরাগরেণু একসাথে হালকাভাবে লাগানো অবস্থায় থাকেযাকে পরাগ চতুষ্টয় বা পোলেন টেট্রাড (Pollen tetrad) বলে। তবে পরিণত অবস্থায় পরাগরেণুগুলো পরস্পর আলাদা হয়ে যায়। Orchidaceae, Asclepiadaceae এসব গোত্রের উদ্ভিদের পরাগরেণু পৃথক না হয়ে একসাথে থাকে। একসাথে থাকা পরাগরেণুগুলোর এ বিশেষ গঠনকে পলিনিয়াম (pollinium) বলে।
পরাগরেণুর গঠন :
পরাগরেণু সাধারণত গোলাকার, ডিম্বাকার ও ত্রিভুজাকার হয় এবং এদের ব্যাস ১০ থেকে ২০০ মাইক্রোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতিটি পরাগরেণু এককোষী, এক নিউক্লিয়াসবিশিষ্ট এবং হ্যাপ্লয়েড ।প্রতিটি পরাগরেণুর দুটি ত্বক থাকে। বাইরের ত্বকটি কিউটিনযুক্ত, পুরু ও শক্ত। এটি বহিঃত্বক বা এক্সাইন (axine) নামে পরিচিত। এক্সাইন বিভিন্নভাবে অর্নামেন্টেড থাকে। এক্সাইন-এ বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান থাকে, প্রধান উপাদান হলো স্পোরোপোলেনিন। ভেতরের ত্বকটিপাতলা এবং সেলুলোজ নির্মিত। এর নাম অন্তঃত্বক বা ইনটাইন (intine)। এক্সাইন (বহিঃত্বক) স্থানে স্থানে অত্যন্ত পাতলা ছিদ্রের ন্যায় অংশকে জনন ছিদ্র, রেণুর বা জার্মপোর (germpore) বলে। একটি পরাগরেণুতে জার্মপোর (২০টি পর্যন্ত) থাকে। পরাগরেণুর সাইটোপ্লাজম ঘন থাকে এবং প্রথম পর্যায়ে নিউক্লিয়াসটি কালে নিউক্লিয়াসটি
পুংগ্যামেটোফাইটের বিকাশ বা পরিস্ফুটন ও গঠন :
পরাগরেণু(n) হলো পুংগ্যামেটোফাইটের প্রথম কোষ । পরাগরেণুর নিউক্লিয়াসটি বিভাজিত হয়ে দুটি অসম নিউক্লিয়াস গঠন করে। বড়টিকে বলাহয় নালিকা নিউক্লিয়াস (tube nucleus) এবং ছোটটিকে বলা হয় জনন নিউক্লিয়াস (generative nucleus)। পরাগধানীর প্রাচীর ফেটে গেলে সাধারণত এই দ্বি-নিউক্লিয়াস অবস্থায় পরাগরেণু বের হয়ে আসে এবং পরাগায়ন (Pollination) সংঘটিত হয়।
উদ্ভিদে পরাগায়নের কারণে কোনো তরল পদার্থ (পানি) ছাড়াই নিষিক্তকরণ (fertilization) সম্ভব হয়।পরাগায়নের মাধ্যমে পরাগরেণু স্ত্রীকেশরের গর্ভমুণ্ডে পতিত হয় এবং অঙ্কুরিত হয় অর্থাৎ ইনটাইন বৃদ্ধি পেয়ে জার্মপপার (জননছিদ্র) দিয়ে নালিকার আকারে বাড়তে থাকে। এ নালিকাকে পোলেন টিউব (pollen tube) বা পরাগ নালিকা বলে।
পাগনালিকার ভেতরে নালিকা নিউক্লিয়াস এবং পরে জনন নিউক্লিয়াস প্রবেশ করে। নালিকাটি গর্ভদণ্ডের ভেতর ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং গর্ভাশয়ের ভেতরে ডিম্বর পর্যন্ত পৌঁছায়। ইতোমধ্যে জনন নিউক্লিয়াসটি মাইটোসিসপ্রক্রিয়ায় বিভক্ত হয়ে দুটি পুংগ্যামিট (male gamete) বা শুক্রাণু সৃষ্টি করে।
পরাগরেণু, নালিকা নিউক্লিয়াস, জনন নিউক্লিয়াস, পরাগ নালিকা, পুংগ্যামিট- এগুলোর সমন্বয়ে গঠিত হলো পুংগ্যামিটোফাইট, যা অত্যন্ত ক্ষুদ্র এবং স্পোরোফাইটের উপর নির্ভরশীল।
ডিম্বকের পরিস্ফুটন :
ডিম্বক হলো ডিম্বাশয়ের অভ্যন্তরস্থ একটি অংশ যা মাতৃ জননকোষ সৃষ্টি করে এবং নিষেকের পর বীজে পরিণত হয়। ডিম্বক (ovule) সৃষ্টি হয় গর্ভাশয়ের ভেতরে অমরা (placenta) হতে। প্রথমে অমরাতে একটি ছোট স্ফীত অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত হয়। স্ফীত অঞ্চলটি ক্রমে ডিম্বকে পরিণত হয়।প্রথম পর্যায়ে ডিম্বকের টিস্যুকে মূলত দুটি ভাগে চিহ্নিত করা যায়- চারপাশের আবরণ টিস্যু এবং মাঝের নিউসেলাস (nucellus) টিস্যু। পরবর্তী পর্যায়ে বাইরের আবরণটির নিচে আর একটি আবরণ তৈরি হয়। বাইরের আবরণটি বহিঃত্বক এবং ভেতরেরটি অন্তঃত্বক হিসেবে পরিচিত। ডিম্বকের অগ্রভাগে নিউসেলাসের একটু অংশ অনাবৃত থাকে, কারণ ত্বক এ অংশকে আবৃত করে না।
এটি একটি ছিদ্র পথ বিশেষ, যাকে মাইক্রোপাইল (micropile) বা ডিম্বকরন্ধ্র বলা হয়। ডিম্বকরন্ধের কাছাকাছি নিউসেলাস টিস্যুতে একটি কোষ আকারে বড় হয়। এর নিউক্লিয়াসটিও আকারে অপেক্ষাকৃত বড় থাকে এবং কোষটি ঘন সাইটোপ্লাজমে পূর্ণ থাকে এ কোষকে প্রাইমারি আর্কিস্পোরিয়্যাল কোষ (primary archesporial cell) বলে।
আর্কিম্পোরিয়্যাল কোষটি বিভক্ত হয়ে একটি দেয়ালকোষ এবং একটি প্রাথমিক জননকোষ (primary sporogenous cell) সৃষ্টি করতেপারে অথবা সরাসরি স্ত্রীরেণু মাতৃকোষ (megaspore mother cell) হিসেবে কাজ করে।
ডিপ্লয়েড স্ত্রীরেণু মাতৃকোষটি মায়োসিস প্রক্রিয়ায় বিভক্ত হয়ে চারটি হ্যাপ্লয়েড স্ত্রীরেণু (megaspore) তৈরি করে। চারটি স্ত্রীরেণুর মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তিনটি নষ্ট হয়ে যায় এবং একটি (নিচেরটি) কার্যকর হয়।
ডিম্বকের গঠনঃ
একটি ডিম্বক (megaspo-rangium=ovule) নিম্নলিখিত অংশ নিয়ে গঠিত:
১। ডিম্বকনাড়ী (Funiculus) : ডিম্বকের বোঁটার অংশকে ডিম্বকনাড়ী বলা হয়। এ বোঁটার সাহায্যে ডিম্বক অমরার সাথে সংযুক্ত থাকে। কোনো কোনো প্রজাতিতে ডিম্বকনাড়ী ডিম্বকত্বকের সাথে আংশিকভাবে যুক্ত থেকে শিরার মতো গঠন করে। এই যুক্ত অংশকে
২। ডিম্বকনাভী (Hilum) : ডিম্বকের যে অংশের সাথে ডিম্বকনাড়ী সংযুক্ত থাকে তাকে ডিম্বকনাভী বলে।
৩। নিউসেলাস (Nucellus) বা ভ্রূণপোষক টিস্যু: তুক দিয়ে ঘেরা প্রধান টিস্যুই হলো নিউসেলাস।
৪। ডিম্বকত্বক (Integument) : নিউসেলাসের বাইরের আবরণীকেই ডিম্বকত্বক বলা হয়। সাধারণত এটি দুস্তর বিশিষ্ট।
৫। ডিম্বকরন্ধ্র (Micropyle) : ডিম্বকের অগ্রপ্রান্তে ত্বকের ছিদ্র অংশই ডিম্বকরন্ধ্র বা মাইক্রোপাইল।
৬। ডিম্বকমূল (Chalaza) : ডিম্বকের গোড়ার অংশ, যেখান থেকে ত্বকের সূচনা হয়, তাকেডিম্বকমূল বলে।
৭। ভ্রূণথলি (Embryo sac) : নিউসেলাসের মধ্যে অবস্থিত থলির ন্যায় অংশকে ভ্রূণথলি বলে।
ভ্রূণথলিঃ নিম্নবর্ণিত তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত।
(ক) গভর্যন্ত্র (Egg-apparatus) : ডিম্বকরন্ধ্রের সন্নিকটে তিনটি কোষ দিয়ে গঠিত ভ্রূণথলির অংশকে গর্ভযন্ত্র বলে।গভর্যন্ত্রের তিনটি কোষের মধ্যে ভেতরের দিকের সবচেয়ে বড় কোষটিকে ডিম্বাণু এবং বাইরের দিকের ছোট কোষ দুটিকে সহকারি কোষ (Synergid) বলে।
(খ) প্রতিপাদ কোষ (Antipodal cell) : এরা ডিম্বক মূলের দিকে অবস্থিত ভ্রূণথলির তিনটি বিশেষ কোষ।
(গ) সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াস (Secondary nucleus) ; দুমেরু থেকে আগত এবং দ্রুণথলির কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত দুটি নিউক্লিয়াসকে মেরু নিউক্লিয়াস (Polar nucleus) বলে । নিউক্লিয়াস দুটি মিলিত হয়ে যে একটি ডিপ্লয়েড (2n) নিউক্লিয়াস গঠন করে তার নাম সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াস।
বিভিন্ন প্রকার ডিম্বক :
১. উধ্বমুখী (Orthotropous বা Atropous ) : ঊর্ধ্বমুখী অর্থাৎ ডিম্বকের মুখ উপরে থাকে। এই প্রকার ডিম্বকে ডিম্বকনাড়ী, ডিম্বকমূল ও ডিম্বকরন্ধ্র একই সরল রেখায় খাড়াভাবে অবস্থিত থাকে। ডিম্বকরন্ধ্র শীর্ষে এবং ডিম্বকমূল গোড়ায় অবস্থান করে। উদাহরণ: বিষকাটালী (পানি মরিচ), গোলমরিচ, পান ইত্যাদি।
২. অধোমুখী বা নিম্নমুখী (Anatropous ) অধোমুখী ডিম্বকের মুখ নিচে থাকে। এই প্রব ডিম্বকে ডিম্বকরন্ধ্র নিচের দিকে ডিম্বকনাড়ীর কাছাকাছি থাকে আর ডিম্বকমূল উপরে থাকে। উদাহরণ : শিম, রেড়ি, ছোলা ইত্যাদি। ঊর্ধ্বমুখী ও অধোমুখী একটি অপরটির উল্টো।
৩. পার্শ্বমুখী (Amphitropous) : পার্শ্বমুখী অর্থাৎ ডিম্বকের মুখ উপরে বা নিচে নয়, এক পাশে থাকে। এই প্রকার ডিম্বকে ডিম্বকরন্ধ্র ও ডিম্বকমূল বিপরীতমুখী অবস্থানে দুই পাশে থাকে এবং ডিম্বনাড়ীর সাথে সমকোণে অবস্থান করে। উদাহরণ-ক্ষুদিপানা, পপি (আফিম) ইত্যাদি।
৪. বক্রমুখী (Campylotropous) ; বক্রমুখী অর্থাৎ ডিম্বকের মুখ পাশ্বমুখীর চেয়ে কিছুটা বেঁকে নিচের দিকে মুখ করানো অবস্থায় থাকে। এই প্রকার ডিম্বকে ডিম্বকমূল ডিম্বকনাড়ীর সাথে সমকোণে অবস্থিত কিন্তু ডিম্বকরঞ্জ অঞ্চলটি একটু বাঁকা হয়ে ডিম্বকনাড়ীর কাছাকাছি চলে আসে। উদাহরণ- সরিষা, কালকাসুন্দা।
স্ত্রীগ্যামিটোফাইটের বিকাশ বা পরিস্ফুটন (Development of female gametophyte) ও গঠন :
স্ত্রীরেণু (megaspore) হলো স্ত্রীগ্যামিটোফাইট-এ ট-এর প্রথম কোষ। কার্যকরী স্ত্রীরেণুটি বিভাজিত ও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে স্ত্রীগ্যামিটোফাইট গঠন করে। স্ত্রীগ্যামিটোফাইট এমব্রিয়ো স্যাক (embryo sac) বা ভ্রূণথলি নামেও পরিচিত। ভ্রূণথলিরস্ত্রীরেণুটি বিভাজিত ও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে স্ত্রীগ্যামিটোফাইট গঠন করে।
ভ্রূণথলির গঠনঃ প্রধানত তিন প্রকার, যথা-
(i) মনোস্পোরিক (monosporic)-এক্ষেত্রে একটি স্ত্রীরেণু ভ্রূণথলি গঠনে অংশগ্রহণ করে;
(ii) বাইস্পোরিক(bisporic)-এক্ষেত্রে দুটি স্ত্রীরেণু ভ্রূণথলি গঠনে অংশগ্রহণ করে এবং
(iii) টেট্রাস্পোরিক (tetrasporic)-এক্ষেত্রে চারটি স্ত্রীরেণুই ভ্রূণথলি গঠনে অংশগ্রহণ করে। শতকরা প্রায় ৭৫% উদ্ভিদেই মনোস্পোরিক প্রক্রিয়ায় ভ্রূণথলি গঠিত হয়। তাই
এখানে ভ্রূণথলি গঠনের মনোস্পোরিক প্রক্রিয়াই বর্ণনা করা হলো। এটি Polygonun ধরন হিসেবেও পরিচিত। সর্বপ্রথম স্ট্রাসবার্গার ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে Polygonum divaricatum নামক উদ্ভিদে মনোস্পোরিক প্রক্রিয়ায় ভ্রূণথলি গঠনের বর্ণনা দেন।
স্ত্রীগ্যামিটোফাইট সৃষ্টি :
এক্ষেত্রে ডিপ্লয়েড স্ত্রীরেণু মাতৃকোষ হতে মায়োসিস প্রক্রিয়ায় চারটি হ্যাপ্লয়েড স্ত্রীরেণু গঠিত হয় যার মধ্যে উপরের তিনটি নষ্ট হয়ে যায় এবং নিচেরটি কার্যকরী থাকে।
কার্যকরী স্ত্রীরেণু নিউক্লিয়াসটি মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে দুটি নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়। নিউক্লিয়াস দুটি স্ত্রীরেণু কোষের দুই মেরুতে অবস্থান করে। প্রতিটি মেরুর নিউক্লিয়াস পরপর দুবার বিভাজিত হয়ে চারটি করে নিউক্লিয়াস গঠন করে। প্রতিটি নিউক্লিয়াস অল্প সাইটোপ্লাজম এবং হালকা প্রাচীর দিয়ে আবৃত থাকে।
ইতোমধ্যে স্ত্রীরেণুকোষটি একটি দুইমেরু যুক্ত থলির ন্যায় অঙ্গে পরিণত হয় এবং এর প্রতি মেরুতে ৪টি করে মোট ৮টি নিউক্লিয়াস থাকে। এ অবস্থায় প্রতি মেরু হতে একটি করেইতোমধ্যে স্ত্রীরেণুকোষটি একটি দুইমেরু যুক্ত থলির ন্যায় অঙ্গে পরিণত হয় এবং এর প্রতি মেরুতে ৪টি করে মোট ৮টি নিউক্লিয়াস থাকে ।
এ অবস্থায় প্রতি মেরু হতে একটি করে নিউক্লিয়াস থলির মাঝখানে চলে আসে এবং পরস্পর মিলিত হয়, যাকে ফিউশন নিউক্লিয়াস বা সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াস (fusion nucleus or secondary nucleus) বলা হয়।
ভ্রূণথলির যে মেরু ডিম্বকরন্ধ্রের দিকে থাকে সে মেরুর তিনটি নিউক্লিয়াসকে একত্রে egg apparatus বা ডিম্বাণু যন্ত্র বা গর্ভযন্ত্র বলে। ডিম্বাণু যন্ত্রের মাঝখানের নিউক্লিয়াসটি বড় থাকে, একে এগ, ওভাম বা উস্ফিয়ার (egg, ovum or oosphere) বলা হয়। বাংলায় একে আমরা ডিম্বাণু বা স্ত্রীগ্যামিট বলি ।
ডিম্বাণুর দু'পাশের দুটি নিউক্লিয়াসকে সিনারজিড (synergid) বা সাহায্যকারী নিউক্লিয়াস বা সাহায্যকারী কোষ বলা হয়। ভ্রূণথলির যে মেরু ডিম্বকমূলের দিকে থাকে সে মেরুর নিউক্লিয়াস তিনটিকে প্রতিপাদ নিউক্লিয়াস বা প্রতিপাদ কোষ বলে।
ভ্রূণথলি এবং এতে অবস্থিত ডিম্বাণু, সাহায্যকারী নিউক্লিয়াস, প্রতিপাদ নিউক্লিয়াস এবং সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াসকে মিলিতভাবে স্ত্রীগ্যামিটোফাইট বলা হয়। ডিম্বকের মধ্যে স্ত্রীগ্যামিটোফাইটের উৎপত্তি ঘটে। স্ত্রীগ্যামিটোফাইট স্পোরোফাইটের উপর নির্ভরশীল।
সস্যের উৎপত্তি (Development of endosperm) : ভ্রূণ উৎপন্ন হওয়ার সাথে সাথে সস্য নিউক্লিয়াসটি দ্রুত মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়ে অনেকগুলো নিউক্লিয়াস সৃষ্টি করে। নিউক্লিয়াসগুলো সাইটোপাজমের সমন্বয়ে কোষে পরিণত হয়ে বিশেষ এক ধরনের টিস্যুর সৃষ্টি করে। এ টিস্যুকে সস্য বা এন্ডোম্পার্ম (endasperm) বলে। পরিস্ফুটনরত ভ্রূণের দ্বারা বীজের সস্য সম্পূর্ণরূপে শোষিত হওয়ায় বীজটি যদি সস্যবিহীন হয়, তখন সেই প্রকার বীজকে অসস্যল বীজ (non-endospermic seed) বলে- যেমন মটর, ছোলা, আম ইত্যাদি অপর পক্ষে বীজে যদি সস্যের কিছু অংশ বর্তমান থাকে তবে সেই প্রকার বীজকে সস্যল বীজ (endospermic seed) বলা হয় । যেমন-ধান, গম, রেড়ি।
ফলের উৎপত্তি (Development of fruit): নিষেকের পর ফুলের স্তবকগুলোর মধ্যে গর্ভাশয় ছাড়া অন্যসব অংশ সাধারণত শুকিয়ে ঝরে পড়ে। নিষেক গর্ভাশয়কে বর্ধিত হতে উদ্দীপিত করে। ক্রমবৃদ্ধির ও বিভিন্ন পরিবর্তনের মাধ্যমে গর্ভাশয় শেষ পর্যন্ত ফলে পরিণত হয়। একটি পূর্ণাঙ্গ ভ্রূণে বীজপত্র ও ভ্রূণের ভ্রূণাক্ষ থাকে। ভ্রূনাক্ষের উপরের অংশ ভ্রূণমুকুল এবং নিম্নাংশ হলো ভ্রূণমূল ।
বীজের উৎপত্তি (Development of seed) : নিষেকের উদ্দীপনায় ভ্রূণ ও সস্যের বৃদ্ধির সাথে সাথে গর্ভাশয়ের অন্যান্য অংশও দ্রুত বৃদ্ধি লাভ করতে থাকে। ডিম্বকত্বক পরিবর্তিত হয়ে বীজত্বকে পরিণত হয়। একই সাথে খাদ্যের জলীয় অংশ ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ায় নরম ডিম্বক শুষ্ক হয়ে কঠিন বীজে পরিণত হয় । এরূপ পরিবর্তনকালে ডিম্বকনাড়ীটি বীজের একটি তৃতীয় স্তর সৃষ্টি করে। একে এরিল (aril) বা বীজ উপাঙ্গ বলে। লিচু, লিচু, জয়ফল, শাপলা বীজে এরিল সৃষ্টি হয়। লিচু ও কাঠলিচুর এরিল হলো ভোজ্য অংশ।
অযৌন জনন (Asexual reproduction) পুং ও স্ত্রী গ্যামেটের মিলন ছাড়া কোন জীব অপতাজীর সৃষ্টি করলে তাকে অযৌন জনন বলে। দুভাবে এ জনন
ঘটতে পারে- অযৌন স্পোর সৃষ্টির মাধ্যমে এবং দেহ অঙ্গের মাধ্যমে । নিচে এদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো ।
১. অযৌন স্পোর সৃষ্টির মাধ্যমে নিচুশ্রেণির বেশকিছু উদ্ভিদে বিভিন্ন ধরনের রেণু বা স্পোর (spore) উৎপন্ন হয়। এসব স্পোর অংকুরিত হলে নতুন উদ্ভিদের জন্ম হয়। সাধারণত শৈবালে অক্সোস্পোর, অ্যাপ্ল্যানোস্পোর, হিপনোস্পোর। জম্পোর প্রকৃতির স্পোর উৎপন্ন করে। ছত্রাক কনিডিয়া, অয়ডিয়া, ক্ল্যামাইডোস্পোর, পিকনিওস্পোর ইত্যাদি স্পোর সৃষ্টি করে।(ব্রায়োফাইটার স্পোর উৎপাদনকারী অঙ্গ হলো ক্যাপসুল এবং টেরিডোফাইটাতে স্পোরাঞ্জিয়ামের অভ্যন্তরে স্পোর তৈরি হয়।
২. দেহ অঙ্গের মাধ্যমে আবৃতবীজী উদ্ভিদের কোন দেহ অঙ্গের (যেমন-মূল, কাণ্ড, পাতা) মাধ্যমেও অযৌন জনন সম্পাদিত হয় । দেহ থেকে বিভিন্ন অংশবিশেষ নতুন জীব সৃষ্টি করে বলে একে অঙ্গজ জনন বলে। প্রকৃতিতে অনেক উদ্ভিদে স্বাভাবিকভাবেই অঙ্গজ বিমান ঘটতে দেখা যায়। তবে কৃত্রিম উপায়েও অঙ্গজ জনন ঘটানো সম্ভব। নিচে বিভিন্ন ধরনের অঙ্গজ প্রজনন আলোচিত হলো।
ক. স্বাভাবিক অঙ্গজ জননঃ নিম্নলিখিত উপানো স্বাভাবিক অঙ্গজ জনন ঘটেতে পারে।
• খন্ডায়ন (Fragmentation) (Spirogyra, Oscillatoria প্রভৃতি নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদের সেই কোন কারণে এক বা একাধিক খণ্ডে বিভক্ত হলে প্রায় প্রতিটি বস্তু থেকে নতুন উদ্ভিদ জন্মায়।
• মুকুলোদহাম (Budding) ( ঈস্ট নিজ দেহে একাধিক মুকুল উৎপাদন করে। প্রতিটি মুকুল বিচ্ছিন্ন হয়ে নতুন ঈস্টের জন্ম দেয়।
• কান্ড দ্বারা (By stems) : পরিবর্তিত মৃদগত কান্ড, যেমন আদার, রাইজোম আলুর টিউবার, পেঁয়াজের বাল্ব থেকে নতুন গাছ জন্মায়। এছাড়া অর্ধবায়বীয় পরিবর্তিত কান্ড কচু,শুষনি,কলমী, থানকুনী এবং বায়বীয় পরিবর্তিত কান্ড (ফনিমনসার পর্ণকান্ড) থেকেও নতুন উদ্ভিদে জন্মে থাকে। কলা, পুদিনা,
আনারস, চন্দ্রমল্লিকা, বাঁশ প্রভৃতি উদ্ভিদে সাকার (বিশেষ কাও)-এর সাহায্যে প্রজনন হয়।
• মূল দ্বারা (By roots): কাঁকরোল,মিষ্টি আলু, রাঙ্গা আলু, ডালিয়া, শতমূলী,পটল প্রভৃতি গাছের মূল থেকে নতুন গাছ জন্মায়।
• পাতা দ্বারা (By leaves) : পাথরকুচি উদ্ভিদের একটি পাতা উর্বর মাটিতে ফেলে রাখলে পাতার কিনারা থেকে বেশ কয়েকটি চারা গজায়।
খ. কৃত্রিম অঙ্গজ জনন : কৃত্রিম পদ্ধতি প্রয়োগ করে ফল ও ফুলের গুণমান বজায় রেখে এ ধরনের জনন ঘটানো হয়। যে পদ্ধতিতে এটি সম্ভব তাঁকে কলম করা বলে। কলম নিম্নবর্ণিত ধরনের হয়ে থাকে।
ক. শাখাকলম (Cuttings) : আখ, জবা, ক্রোটন, গোলাপ, আপেল, কমলালেবু, পাতাবাহার, সজিনা প্রভৃতি গাছের পরিণত কান্তের অংশবিশেষ কেটে ভিজে মাটিতে পুঁতলে তা থেকে নতুন গাছ জন্মায় ।
খ. দাবা কলম (Dayering) : লেবু, যুঁই প্রভৃতি গাছের মাটি সংলগ্ন লম্বা শাখাকে বাঁকিয়ে মাটি চাপা দিলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মাটির মধ্যে অবস্থিত শাখাটির পর্ব থেকে অস্থানিক মূল নির্গত হয়। মাটি চাপা অংশের ছাল কেটে দিলে। সেখানে দ্রুত মূল গঠিত হয়। মূলসহ শাখাটি কেটে অন্যত্র লাগালে নতুন গাছের জন্ম হয়। উদাহরণ- স্টোরেরী, চন্দ্রমল্লিকা, আপেল, সফেদা
গ. গুটিকলম (Cootec) : শক্ত কাণ্ডযুক্ত যে কোন ফল গাছ, যেমন আম, লেবু, ইত্যাদি বা গন্ধরাজ, গোলাপ! ইত্যাদি ফুলের গাছে গুটিকলম তৈরি করা যায়। গুটিকলমের জন্য নির্বাচিত অংশের ছাল ছাড়িয়ে সেখানে গোবর-মাটি ও খড় দিয়ে ঢেকে শক্ত করে দড়ি বেঁধে দিতে হয়। নিয়মিত পানি দিতে থাকলে ঐ অংশে অস্থানিক মূল গঠিত হয়। মূলসহ শাখাটি বিচ্ছিন্ন করে ভিজে মাটিতে রোপণ করলে অন্যত্র তা থেকে নতুন গাছ জন্মায়। যেমন লেবু, কমলালেবু, বাগান বিলাস ।
ঘ. জোড়কলম (Grafting) : বিভিন্ন ফল ও ফুলগাছের উন্নত মান অপত্য বংশধরের মধ্যে বজায় রাখার জন্য জোড়কলম তৈরি করা হয়। কাংখিত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন নির্বাচিত গাছের কোন শাখা বাঁকিয়ে অথবা মুকুলসহ একটি শাখাকে বিচ্ছিন্ন করে মাটিতে বা টবে লাগানো অন্য একটি গাছের সঙ্গে জুড়ে দিতে হয়। এ অংশটিকে সিয়ন বলে। জোড়কলম সিয়নকে যে গাছের সঙ্গে জোড়া হয় তাকে স্টক (stock) বলে । স্টক যেকোন নিম্নমানের গাছ হতে পারে (সিয়নকে লালন করাই স্টকের কাজ । লক্ষণীয় নিয়ন সাধারণত উচ্চমানের গাছের অংশ হয়ে থাকে। সুতরাং ফল বা ফুলের চরিত্র নির্ভর করে সিয়নের উপরে স্টকের উপরে নয়। উদাহরণ- আম, জাম, লিচু, পেয়ারা, কুল, চাঁপা, ম্যাগনোলিয়া ইত্যাদি। জোড় কলম
ঙ. চোখ কলম (Budding) বা কুঁড়ি সংযোজন : কাংখিত ফলনযুক্ত গাছের চোখ বা কুঁড়িকে একই প্রজাতির অন্য একটি উদ্ভিদের সমব্যাসযুক্ত ডালের কোন স্থান ছেঁচে খাঁজ অনুযায়ী স্থাপন করলে কিছুদিন পর কাংখিত অংশ হতে মুকুল গজিয়ে ঐ ডাল কাংখিত গুণসম্পন্ন ফল দেবে পেড়ইগাছে সচরাচর এ ধরনের চোখ কলম করা হয়।
পার্থেনোজেনেসিস (Parthenogenesis; গ্রিক Parthenos = virgin genesis = birth): সাধারণত ডিম্বাণু নিষিক্ত হয়ে জাইগোটে পরিণত হয়। জাইগোট বর্ধিত ও বিকশিত হয়ে নতুন উদ্ভিদের জন্ম দেয়। কখনো কখনো ডিম্বাণু নিষিক্ত না হয়েই বর্ধিত ও বিকশিত হয়ে নতুন উদ্ভিদের জন্ম দিয়ে থাকে অনিষিক্ত ডিম্বাণুর এভাবে নতুন উদ্ভিদ জন্ম দেওয়ার প্রক্রিয়াকে পার্থেনোজেনেসিস বা অপুংজনি বলে। Spirogyra, মৌমাছি প্রভৃতি জীবে পার্থেনোজেনেসিস ঘটতে দেখা যায়।
হরমোন প্রয়োগে বীজবিহীন ফল উৎপাদন প্রক্রিয়াকে পার্থেনোকার্পি (parthenocarpy) বলা হয়। উদাহরণ লেবু, কমলালেবু প্রভৃতি।
পার্থেনোজেনেসিস প্রধানত- দুই প্রকার। হ্যাপ্লয়েড ও ডিপ্লয়েড পার্থেনোজেনেসিস ।
ক. অনিষিক্ত ডিম্বাণু (in) থেকে ভ্রূণ সৃষ্টি হয়ে নতুন উদ্ভিদের জন্ম নিলে সেই প্রক্রিয়াকে হ্যাপ্লয়েড পার্থেনোজেনেসিস (haploid parthenogenesis) বলে। উদাহরণ : তামাক, কাকমচি ইত্যাদি ।
খ. ডিম্বাণু সৃষ্টির সময় জনন মাতৃকোষে মিয়োসিস না হলে ডিম্বাণু ডিপ্লয়েড (2n) থাকে। এই ডিপ্লয়েড ডিম্বাণু নিষিক্ত না হয়ে সরাসরি ভ্রূণ গঠন করে । এই ভ্রূণ বর্ধিত ও বিকশিত হয়ে নতুন উদ্ভিদ জন্ম দেয় । ডিপ্লয়েড ডিম্বাণু থেকে এভাবে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে ডিপ্লয়েড পার্থেনোজেনেসিস (diploid parthenogenesis) বলে। উদাহরণ- Antennaria Alchemilla নামক উদ্ভিদ ।
উদ্ভিদের কৃত্রিম প্রজনন (Artificial Reproduction of Plants) প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে মানুষ যখন চাষাবাদ শুরু করে তখন তাকে তার প্রয়োজনীয় উদ্ভিদ নির্বাচনের (selection) মাধ্যমে সেগুলোকে রোপণ করতে শিখেছে। এসব নির্বাচিত উদ্ভিদ আরও উন্নত করতে মানুষ নানা ধরনের কৌশল উদ্ভাবন করেছে। বিজ্ঞানী Camerarius (১৬০৪) প্রথমে কিছু উদ্ভিদের মধ্যে পরাগায়ন নিয়ন্ত্রণ কৌশল উদ্ভাবনকরেন। এর মাধ্যমে তিনি কয়েকটি উদ্ভিদের পুষ্পের স্ত্রী ও পুং অংশ চিহ্নিত করে প্রজনন কৌশল আবিষ্কার করেন। এ কৌশল লাগিয়ে Kocircuter (১৭৬১) বেশ কিছু উদ্ভিদের (Dianthus, Nicotiana, Hyoscymus) সংকর উদ্ভিদ উৎপাদন করে চমক সৃষ্টি করেন। এরপর মেন্ডেলীয় ধারণা প্রতিষ্ঠিত হলে এর ধারার অগ্রগতি আরও ত্বরান্বিত হয় । (দুটি বিসদৃশ্য নির্বাচিত উদ্ভিদের মধ্যে যেখানে প্রাকৃতিক উপায়ে পরাগায়ন ও প্রজনন ঘটানো সম্ভব সেখানে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে পরাগায়ন ঘটিয়ে উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন সাধন করে উন্নত প্রকরণ বা জাত সৃষ্টি করাকে উদ্ভিদের কৃত্রিম প্রজনন বলে ।
কৃত্রিম প্রজনন প্রক্রিয়াঃ
১. প্যারেন্ট নির্বাচন (Selection of parents) : সংকরায়নের জন্য সঠিক উদ্ভিদ নির্বাচন এই প্রক্রিয়ার প্রথম কাজ । এ কাজে সতেজ ও সবল উদ্ভিদ নির্বাচন বাঞ্ছনীয় ।
২. প্যারেন্টের স্ব-পরাগায়ন (Selfing of parents) : এ পর্যায়ে নির্বাচিত প্যারেন্টের মধ্যে স্ব-পরাগায়ন ঘটানো হয়।
৩. ইমাস্কুলেশন (Emasculation) : সংকরায়নের টি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এ প্রক্রিয়ায় পরাগধানী রিপুষ্ট ও পরিপক্ক হওয়ার পূর্বেই স্ত্রীউদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত ছেলে উভলিঙ্গ ফুল হতে পুংকেশরগুলো অপসারণ করা হয়। এভাবে (উভলিঙ্গ ফুলকে পুরুষত্বহীন করার পদ্ধতিকে ইমাস্কুলেশন বলে।
৪. ব্যাগিং (Bagging) : ইমাস্কুলেশনের পর ঐ উদ্ভিদগুলোর ফুলসহ বিটপের অংশ পলিথিন ব্যাগ দিয়ে আবদ্ধ করে রাখা হয়, যাতে পর-পরাগায়ন ও সংক্রমণ থেকে রক্ষা পায় ।
৫. ক্রসিং (Crossing) (নির্ধারিত পুরুষ ফুলের পরাগধানী হতে পরাগরেণু সংগ্রহ করে সেগুলোকে ইমাস্কুলেটেড স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থাপন করা হয়। এ প্রক্রিয়াকে ক্রসিং বলে । এ কাজের সময় স্ত্রী ফুলের ব্যাগটি সাময়িকভাবে সরিয়ে ফেলা হয় এবং ক্রসিং-এর পর সেটি পুনরায় স্থাপন করা হয়।
৬. লেবেলিং (Labelling) : ক্রসিং এর পর পরই ঐ ফুলগুলোকে ট্যাগ দিয়ে বেঁধে চিহ্নিত করে রাখা হয়। এতে ইমাস্কুলেশনের তারিখ, ক্রসিং এর তারিখ, উদ্ভিদের বিবরণসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংক্ষেপে লিপিবদ্ধ করা হয়ে থাকে।
৭. বীজ সংগ্রহ (Harvesting of seeds) : ফল পরিপক্ক হলে ব্যাগ খুলে ফল কেটে এনে তা থেকে বীজ সংগ্রহ করা হয়। বীজগুলো শুকিয়ে লেবেলসহ সংরক্ষণ করতে হয়।
৮. বীজ বপন (Broadcasting of seeds) : পরবর্তী মৌসুমে জমিতে বীজ বপন করা হয়।
৯. F, -বংশধরের উদ্ভব (Raising of F1 generation) : পরবর্তী জনন ঋতুতে সংরক্ষিত বীজগুলোকে বপন করে যেসব উদ্ভিদ পাওয়া যায় তারা সকলেই সংকর (hybrid)। কারণ তাদের পিতৃ ও মাতৃ উদ্ভিদের জিনতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য ছিল পৃথক ধরনের। এ বংশের উদ্ভিদগুলোকে F1-বংশধর বলা হয়।
১০. F -বংশধরের ব্যবহার ও নতুন প্রকরণ সৃষ্টি ( Handling of F1-generation and raising of new variety) :(F) বংশধরের দুটি উদ্ভিদের মধ্যে ক্রস করিয়ে যেসব উদ্ভিদের সৃষ্টি হয় সেগুলোর নাম হয় F♭-বংশধর। একই পদ্ধতিতে কয়েক প্রজন্ম (generation) ধরে এভাবে সংকরায়ন করতে করতে একটি নতুন প্রকরণ (variety)-এর জন্ম হয়।
আবৃতবীজী উদ্ভিদের যৌন জনন পদ্ধতি উগ্যামাস প্রকৃতির । অপেক্ষাকৃত বড় ও নিশ্চল স্ত্রীগ্যামেট বা ডিম্বাণু-র সাথে ছোট ও সচল পুংগ্যামেট বা শুক্রাণু-র যৌন মিলনে নিষেক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এ সময় গর্ভাশয় ও ডিম্বক নিঃসৃত পদার্থে Ca++" আয়ন উপস্থিত থাকে।
নিষেক প্রক্রিয়াটিকে নিম্নলিখিত ধাপের মাধ্যমে উপস্থাপন করা যায়।
১. পরাগরেণুর অঙ্কুরোদগম : পরাগরেণু উপযুক্ত গর্ভমুক্তে পতিত হলে সেখান থেকে তরল রস শোষণ করে আকারে বড় হয় এবং অঙ্কুরিত হয়ে পরাগরেণুর পাতলা অভ্যন্তর প্রাচীর প্রসারিত হয়ে রজপথে নলরূপে বেরিয়ে আসে।
২. পরাগনালিকার গর্ভাশয়মুখী যাত্রা ও শুক্রাণু সৃষ্টি : পরাগনালিকাটি ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে গর্তমুক্ত থেকে গর্ভদন্ডের ভেতর দিয়ে গর্ভাশয় পর্যন্ত পৌঁছায় এবং গর্ভাশয়ের স্তর ভেদ করে ডিম্বক পর্যন্ত চলে আসে। ইতোমধ্যে পরাগনালিকার ভেতরে অবস্থিত জনন নিউক্লিয়াসটি মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভক্ত হয়ে দুটি পুংগ্যামেট বা শুক্রাণু সৃষ্টি করে। অধিকার। উদ্ভিদে পরাগনালিকা ডিম্বকরন্ধ্র পথে ডিম্বকে প্রবেশ করে (porogamy) কিছু কিছু উদ্ভিদে (যেমন, Casuarina, ঝাউ, পরাগনালিকা ডিম্বকমল দিয়ে ডিম্বকে প্রবেশ করে Chalazogany) কতিপয় ক্ষেত্রে (যেমন- . কুমড়া) পরাগনালিকা (ডিম্বকত্বক বিদীর্ণ করে প্রবেশ করে লাভmesogamy)। সাধারণত শুক্রাণুসহ একটি মাত্র নালিকাই ডিম্বকে প্রবেশ করে থাকে।
৩. পরাগনালিকার ডিম্বকস্থ ভূণথলিতে প্রবেশ ও শুক্রাণু নিক্ষিপ্তকরণ : পরাগনালিকা প্রথমে গর্ভাশয়ের স্তর ভেদ করে ডিম্বকে প্রবেশ করে। ইতোমধ্যে ডিম্বকে অবস্থিত স্ত্রীরেণু হতে ডিম্বাণু সৃষ্টি হয় (ডিম্বাণু ভ্রুণথলিতেই অবস্থান করে। পরাগনালিকা শেষ পর্যন্ত ভূণথলিতে প্রবেশ করে। ভ্রূণথলিতে প্রবেশ করে এটি সহকারী কোষের উপর দিয়ে ডিম্বাণুর কাছে পৌঁছে। পরে পরাগনালিকার অগ্রভাগ প্রসারিত হয়ে ফেটে যায় এবং পুংগ্যামেট ভ্রুণথলিতে নিক্ষিপ্ত হয়।
৪. ভূণথলিতে ডিম্বাণুর সাথে শুক্রাণুর মিলন : পরাগনালিকা থেকে ভ্রুণথলিতে নিক্ষিপ্ত দুটি পুংগ্যামেটের মধ্যে একটি ডিম্বাণুর সাথে মিলিত ও একীভূত হয়ে যায় অর্থাৎ নিষেকক্রিয়া সম্পন্ন করে। এ ধরনের মিলনকে সিগ্যামি (syngamy) বলে । এপর পুংগ্যামেটটি সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াসের সাথে মিলিত ও একীভূত হয়। এ ধরনের মিলনকে ত্রিমিলন (triple fusion) বলে।
দ্বি-নিষেকক্রিয়া (Double fertilization)
একই সময়ে ডিম্বাণুর সাথে একটি পুংগ্যামেটের মিলন ও সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াসের সাথে অপর পুংগ্যামেটের মিলন প্রক্রিয়াকৈ দ্বি-নিষেকক্রিয়া বা দ্বি-গর্ভাধান প্রক্রিয়া, বলে ) ১৮৯৮ সালে নাওয়াসিন (Nawaschin) আবৃতবীজী উদ্ভিদে দ্বিনিষেক আবিষ্কার করেন। Williams Friendman ১৯৯০ সালে (aphedranevadensis নামক নগ্নবীজী উদ্ভিদেদ্বিনিষেক আবিস্কার করেন। এ প্রক্রিয়ায় একটি পুংগ্যামেট ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয় এবং অপর পুংগ্যামেট সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াসের সাথে মিলিত হয়; ফলে ডিম্বাণু জাইগোট-এ পরিণত হয় এবং ডিপ্লয়েড (2n) অবস্থা প্রাপ্ত হয়। অপরদিকে সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াস ট্রিপ্লয়েড (3n) অবস্থা প্রাপ্ত হয়। এটি কয়েকবার বিভাজন ও বিকাশের মাধ্যমে সস্য টিস্যু গঠন করে। এ সস্য ভ্রূণের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সস্যটিস্যুতে প্রচুর পরিমাণ স্টার্চ, লিপিড ও প্রোটিন জমা থাকে।
সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াসের সাথে পুংগ্যামেটের মিলনকে ত্রিমিলন বলা হয়, কারণ এতে দুটি মেরু নিউক্লিয়াস ও একটি পুংনিউক্লিয়াসসহ তিনটি নিউক্লিয়াসের মিলন ঘটে। নিষেকের পর গর্ভাশয়ে বিভিন্ন পরিবর্তনের শেষ পর্যায়ে ডিম্বক বীজ (seed)-এ এবং গর্ভাশয় ফল (fruit)-এ পরিণত হয়।
ভ্রূণের উৎপত্তি (Development of embryo): নিষেকের পর জাইগোট পুরু প্রাচীর দিয়ে আবৃত হয় এবং কিছু সময় বিশ্রাম নেয় । জাইগোটের বিশ্রাম কেটে গেলে প্রথম বিভাজন সাধারণত আড়াআড়িভাবে হয় ফলে একটি দ্বিকোষী আদিভ্রুণ গঠিত হয় । আদিভূণ সবতলে বিভাজিত হয়ে পরিণত ভ্রূণ গঠন করে।
কৃত্রিম উপায়ে সাধারণত উন্নত বৈশিষ্ট্যমন্ডিত নতুন প্রকরণ সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে সংকরায়ন বা হাইব্রিডাইজেশন (hybridization) বলে।
কৃত্রিম প্রজননের অর্থনৈতিক গুরুত্বঃ
পৃথিবীর জনসংখ্যা যেভাবে দ্রুত হারে বাড়ছে সে তুলনায় খাদ্য উৎপাদন বাড়ছে না। আমাদের মতো অনুন্নত দেশগুলোর খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। উন্নত প্রকরণের উদ্ভিদ লাগিয়ে কম খরচে অধিক ফসল ফলানোই হলো বর্তমান সময়ের কৃত্রিম প্রজননের প্রকৃত উদ্দেশ্য।
নিম্নে কৃত্রিম প্রজননের অর্থনৈতিক গুরুত্ব আলোচনা করা হলো ।
১. অধিক ফলন : শস্যদানা, তত্ত্ব, গবাদি পশুর খাদা, ফল প্রভৃতি উদ্ভিদজাত উৎপন্ন দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করা কৃত্রিম প্রজনন এর প্রধান উদ্দেশ্য । নিচে শস্যদানার ক্ষেত্রে কয়েকটি সাফল্য উল্লেখ করা হলো।
ক, ভুট্টা : আমেরিকার বিজ্ঞানী G. H. Shull ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে ভুট্টার সংকর উদ্ভিদ সৃষ্টির মাধ্যমে ভুট্টার দানা উৎপাদনে দারুণভাবে সফল হন। এর পর ভুট্টার দ্বিসংকর পদ্ধতিতে এর উৎপাদন আরও বাড়ানো হয়েছে।
খ. ধান : ধান উৎপাদনের ক্ষেত্রেও সাফল্য এসেছে। ১৯৬০-এর দশকে ফিলিপিনে অবস্থিত আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা কেন্দ্রের (IRRI, International Rice Research Institute) বিজ্ঞানীগণ ইরি (IRRI) ধান উদ্ভাবন করেন। এখন এশিয়া মহাদেশে ধান উৎপাদন গত ৪০ বছরে প্রায় ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। IRRI এর উচ্চ ফলনশীল ধানের সংকর জাত যা তাইওয়ানের প্রাকৃতিক খাটো জাত / Dee gee-woo-gon' এবং ইন্দোনেশিয়ার লম্বা প্রকৃতির 'Peta' জাতের মধ্যে কৃত্রিম সংকরায়ন ঘটিয়ে উদ্ভাবন করা হয়েছে। এর মধ্যে IR8 জাতের ধান বহুল পরিচিতি লাভ করেছে। বাংলাদেশেও ধান গবেষণা কেন্দ্র BRRI (Bangladesh Rice Research Institute) থেকে একই প্রক্রিয়ায় উদ্ভাবন করেছে BRRI (ব্রি) নামক বেশ কয়েক জাতের উচ্চ ফলনশীল ধান যা বাংলাদেশের খাদ্য সংকট থেকে অনেকাংশে রক্ষা করেছে। এর মধ্যে ব্রি-৮, ব্রি-১১, ব্রি-১৫ ও ব্রি-২৯ উল্লেখযোগ্য।
গ. গম : ঠিক একই উপায়ে গমের ক্ষেত্রেও বিপ্লব ঘটেছে। বর্তমানে বিশ্বের যে উন্নত জাতের গমের চাষ হচ্ছে তার প্রায় সব গমই সৃষ্টি হয়েছে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে। স্বনামধন্য আমেরিকান বিজ্ঞানী Norman Earnest Borlaug)যে উচ্চ ফলনশীল (মেক্সিকান গম উদ্ভাবন করেছেন তাতে পৃথিবীতে গম উৎপাদনের আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। পৃথিবীর ক্ষুধার্ত মানুষের কল্যাণে ও অবদানের জন্য তাঁকে ১৯৭০ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
২. উন্নত গুণগতমান গুণগত মানের ওপর ঐ ফসলের ব্যবহার নির্ভর করে। ফসলভেদে গুণগতমানের পার্থক্য হয়ে থাকে। যেমন খাদ্যশস্যের ক্ষেত্রে দানার আকার, বর্ণ, গন্ধ, রন্ধন গুণাগুণ, সংরক্ষণ ইত্যাদি ফলের আকার, বর্ণ,গন্ধ ইত্যাদি সবজির সংরক্ষপমান (ইক্ষুর শর্করার পরিমাণ ইত্যাদি।
৩. রোগপ্রতিরোধী জাত সৃষ্টি : যেকোন শস্যের সর্বোচ্চ ফলনের প্রধান সমস্যা হলো রোগ ও কীট পতঙ্গের আক্রমণ। BRRI উদ্ভাবিত মুক্তা (BR 10)) গাজী (BR 14), মোহিনী (BR 15) (শাহীবালাম (BR 16) এগুলো রোগ প্রতিরোধী জাত।
৪. প্রতিকূল সহিষ্ণুতা : ফসল ও স্থানভেদে কোন কোন ফসলের অতিবৃষ্টি, খরা, শীত ইত্যাদি এক বা একাধিক প্রতিকূলতা প্রতিরোধী জাতে সৃষ্টির আবশ্যকতা দেখা দেয়। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে এটি সম্ভব । ৫. অধিক অভিযোজন ক্ষমতা : কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে সৃষ্টি উদ্ভিদের অভিযোজন ক্ষমতা বেশি থাকায় এরা বিচিত্র আবহাওয়া ও জলবায়ুতে জন্মাতে পারে।
৬. একই সময়ে পরিপক্কতা : একই শস্য ক্ষেত থেকে একাধিকবার ফসল সংগ্রহের জন্য বেশি পরিশ্রম ও অর্থের প্রয়োজন হয়। একই সময়ে পরিপক্ক হয় সেরূপ শস্য উদ্ভাবন করা প্রয়োজন। এটি কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে করা যায়।
৭. বীজ ঝরে পড়া স্বভাবের পরিবর্তন : ফসল সংগ্রহের আগে মাঠে কোন শস্যের ফল থেকে বীজ ঝরে যেতে থাকে তবে তা ফলনকে বেশি ক্ষতি করে। এটা মুগডালে দেখা যায়। এ বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন করা একান্ত প্রয়োজন ।
৮. উদ্ভিদ বিবর্তনে : কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতির মাধ্যমে নতুন প্রজাতির উদ্ভিদ সৃষ্টি করা যায় । বিবর্তনের আধুনিক ধারণা মতে জিন মিউটেশন, ক্রোমোসোমীয় মিউটেশন জেনেটিক রিকম্বিনেশন নির্বাচন হলো প্রজাতি সৃষ্টির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ।